নিউজ ডেস্ক :: দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের গুনদুম পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পটি একযুগ ধরে চললেও এটির কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা কেউ বলতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর অতি গুরুত্বপূর্ণ এ মেগা প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদিত হয় এবং প্রারম্ভিক খরচ ১ হাজার ৮৫২ কোটি দিয়ে শুরু হলেও ১০ গুণ বাজেট বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকায়। প্রকল্পটির মেয়াদও সপ্তমবারের মতো পিছিয়েছে। সর্বশেষ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন টার্গেট টাইমে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এদিকে সরজমিন এ প্রকল্পটি পরির্দশন করে দেখা গেছে, প্রকল্পের কাজ একেবারে ধীরগতিতে চলছে, সে কারণে টার্গেট টাইম ২০২২ সালের জুনে এটা যে শেষ হবে না তা বলাই বাহুল্য। কক্সবাজারের অদূরে ২৯ একর জমির ওপর ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা ঝিনুক আকারের স্টেশন নির্মাণাধীন হলেও এর অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। যদিও স্টেশন নির্মাণকাজসহ মোট প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪০ শতাংশ বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের উপপরিচালক (পুনর্বাসন) মো. সেলিম।
এদিকে কক্সবাজার স্টেশন থেকে দু-তিন ধাপে ১০২ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার রেললাইন পাতার কাজ শেষ হয়েছে। বাকি প্রায় ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগাম অংশে মোট ১৫-১৬ কিলোমিটারের মতো বনাঞ্চল ও পাহাড় থাকায় সেখানে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। পাহাড়ের মধ্য দিয়ে মাটি তুলে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে রেলপথ তৈরির কাজ চলছে। আবার প্রথম পর্যায়ে ১ হাজার ৩৯১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করার কথা থাকলেও বেশ কিছু মামলার কারণে অধিগ্রহণের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। অপরদিকে ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ চলমান হলেও এখনো পর্যন্ত দু-তিনটি ছাড়া বাকি স্টেশনগুলোর কাজ তেমন এগোয়নি। প্রকল্পটির জন্য সম্পূর্ণ ভূমি অধিগ্রহণ এখনো সম্পন্ন করা যায়নি। যার ফলে ওই সব অঞ্চলে
রেলপথ নির্মাণের কাজে বিঘ্ন ঘটছে। এখানে অধিগৃহীত জমিতে মাটি ভরাটের কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। যার ফলে এ অঞ্চলে কোনো স্টেশন নির্মাণকাজ তেমন এগোয়নি।
এদিকে যে দু-চারটি স্টেশন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে তৎসংলগ্ন রেললাইন ও প্ল্যাটফর্মের কাজও দেখা যায়নি। চকোরিয়া হতে কক্সবাজার সাড়ে ৮ কিমি এবং দোহাজারী থেকে চকোরিয়া সাড়ে তিন কিলোমিটার দুই লটে মোট ১২ কিলোমিটার রেলপথ কোনো রকম বসানো হয়েছে। আবার কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের গুনদুম সীমান্ত পর্যন্ত দেখা গেছে এ ৩২ কিলোমিটার রেলপথের জন্য কোনো কার্যক্রমই শুরু হয়নি ভূমি অধিগ্রহণ তো দূরের কথা।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৬২ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি মাত্র ৩৬ শতাশের মতো। মামলাসহ বেশ কিছু সমস্যার কারণে ১০০ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণই সম্পন্ন হয়নি। যার ফলে আর্থিক অগ্রগতি একটু কম। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের চেয়ে কক্সবাজারে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা বেশি। যার কারণে আমরা টানা কাজ করতে পারছি না। তবে বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা ও ভূমি অধিগ্রহণে দোহাজারীতে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। এখানে মাটি ভরাটের কাজ কম হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, বর্তমানে ২টি কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে- তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লি. চট্টগ্রামের দিকের ৫১ কিলোমিটার এবং ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লি. কক্সবাজারের দিকের ৫১ কিলোমিটার কাজ করছে। এ প্রকল্পের মোট দূরত্ব ১০২ কিলোমিটার।
প্রকল্প পরিচালক জানান, এ ছাড়াও বিদ্যুৎ ও বন বিভাগের কিছু অংশ এ রেলপথের মধ্যে পড়ায় তাদের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিছু বনভূমি কেটে পরিষ্কার করতে হবে, আবার বিদ্যুৎ বিভাগের প্রায় ১ কিলোমিটারজুড়ে ইলেক্ট্রিক পোল বসানো রয়েছে- যা এখনো সরানো হয়নি। সব মিলিয়ে আমরা মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ করলেও লাইন পাতার কাজ দ্রত সম্পন্ন করতে পারছি না।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সম্প্র্রতি দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ফাস্ট ট্রাকভুক্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের একটি হচ্ছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন তৈরির প্রকল্প। তবে করোনাকালে কাজে ধীরগতি, জমি অধিগ্রহণে দেরি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ( বিদ্যুৎ, বনভূমি) কিছু অংশের স্থাপনা সরাতে দেরি হওয়ায় আমরা আগামী বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ হয়তো শেষ করতে পারব না। সে কারণে ৬ মাস পিছিয়ে আগামী বছরের (২০২২) ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পাঠকের মতামত: